Showing posts with label প্রেমের কবিতা. Show all posts
Showing posts with label প্রেমের কবিতা. Show all posts

তুমি: বিশ বছর আগে ও পরে // রফিক আজাদ


তুমি যে-সব ভুল করতে সেগুলো খুবই মারাত্মক ছিল। তোমার কথায় ছিল গেঁয়ো টান, অনেকগুলো শব্দের করতে ভুল উচ্চারণ: ‘প্রমথ চৌধুরী’কে তুমি বলতে ‘প্রথম চৌধুরী’; ‘জনৈক’ উচ্চারণ করতে গিয়ে সর্বদাই ‘জৈনিক’ বলে ফেলতে। এমনি বহুতর ভয়াবহ ভুলে-ভরা ছিল তোমার ব্যক্তিগত অভিধান। কিন্তু সে-সময়, সেই সুদূর কৈশোরে ঐ মারাত্মক ভুলগুলো তোমার বড়-বেশি ভালোবেসে ফেলেছিলুম।

তোমার পরীক্ষার খাতায় সর্বদাই সাধু ও চলতির দূষণীয় মিশ্রণ ঘটাতে। ভাষা-ব্যবহারে তুমি বরাবরই খুব অমনোযোগী ছিলে। বেশ হাবাগোবা গোছের লাজুক ও অবনতমুখী মেয়ে ছিলে তুমি। ‘শোকাভিভূত’ বলতে গিয়ে ব’লে ফেলতে ‘শোকভূত’। তোমার উচ্চারণের ত্র্রুটি, বাক্যমধ্যস্থিত শব্দের ভুল ব্যবহারে আমি তখন এক ধরনের মজাই পেতুম।

২০-বছর পর আজ তোমার বক্ততা শুনলুম। বিষয়: ‘নারী-স্বাধীনতা’! এত সুন্দর, স্পষ্ট ও নির্ভুল উচ্চারণে তোমার বক্তব্য রাখলে যে, দেখে অবাক ও ব্যথিত হলুম।

আমার বুকের মধ্যে জেঁকে-বসা একটি পাথর বিশ বছর পর নিঃশব্দে নেমে গেল।





সব অপ্রয়োজনীয় - রত্নেশ্বর হাজরা


একদিন তুমি পালকি চড়তে চেয়েছিলে
আমি সেদিন –
কাহার পাড়ায় একজন কাহারকেও খুঁজে পাইনি-
একদিন তুমি নৌকো চড়তে চেয়েছিলে
আমার নৌকো-
তখনো ফিরিয়ে দেয়নি জোয়ার-
একটা নতুন রাস্তার জন্য ছিলো তোমার মনস্কামনা
অথচ রাস্তা আমি যতবারই বানাতাম ততোবারই ভেঙে পড়তো।
পালকি, নৌকো এবং রাস্তার আকাঙ্খা তাই
আমার সামনেই তুমি দান করে দিলে তিনজন যুবক ভিখিরিকে...

নাগরদোলা // রত্নেশ্বর হাজরা


 

 
 দেখতে পেলেই ঘুরে বলব নেই তো               তুমি এখানে নেই
ওখানে নেই সেখানে নেই তুমি এখন নাগরদোলায় এখন তোমার
বাঁ দিকের হাত ডান দিকের পা বাঁ দিকের চোখ ডান দিকের কান
উঠছে নামছে হৃদয় টিদয় এখন তোমার

যেতে যেতে - সুভাষ মুখোপাধ্যায়

তারপর যে-তে যে-তে যে-তে
এক নদীর সঙ্গে দেখা।

পায়ে তার ঘুঙুর বাঁধা
পরনে
উড়ু-উড়ু ঢেউয়ের
নীল ঘাগরা।

সে নদীর দুদিকে দুটো মুখ।
এক মুখে সে আমাকে আসছি বলে
দাঁড় করিয়ে রেখে
অন্য মুখে
ছুটতে ছুটতে চলে গেল।

আমি জেলে যাবার পর – নাজিম হিকমত - অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায়



 

জেলখানার চিঠি - নাজিম হিকমত - অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায়







মৃণালের পত্র - দেবব্রত সিংহ



সেই ছুটুবেলাতে আমাদেপাহাড় কোলের জোড়ে
লদী পেরাতে যাইয়ে
এক আষাঢ় মাসের হড়কা বানে
আমি আর আমার ভাই
ভাস্যে গেছলম বানের তোড়ে
ভাইটি গেল ডুবে আমি উঠলম বাঁচে
পাড়ার লোকে বললেক
বিটিছেল্যার জীবন
যদি বেটাছেল্যা হতক
তাহলে কি বাঁচতক।

পরানের গহীন ভিতর-৩২ - সৈয়দ শামসুল হক


নিঝুম জঙ্গল দিয়া যাইতেই ধনেশের ডাক।
যেমন আতখা ভাঙ্গে কাঠুরার বুকের কাছাড়
চক্ষের পলকে তুমি দেখা দিয়া করো মেছমার;
রতির আগুনে সব দাউদাউ, পরিণামে খাক

পরানের গহীন ভিতর-২৫ - সৈয়দ শামসুল হক


কত না দুধের ক্ষীর খায়া গ্যাছে কালের গোপাল,
কতবার কত রোয়া কারবালা খ্যাতের খরায়,
কন না রঙিলা নাও নিয়া গ্যাছে কাল যমুনায়,
অঘোরে হারায়া গাভি ফেরে নাই নিজস্ব রাখাল।

পরানের গহীন ভিতর-২৪ - সৈয়দ শামসুল হক


আবার তোমার কোলে ফিরা যায় তোমার সন্তান,
আবার তোমার কোলে, খালি কোল, উথলায়া পড়ে
দুধের ঘেরানে ভরা, জননী গো, পুন্নিমার চান-
আবার সে ঘরে ফিরা আইসাছে সারাদিন পরে।

পরানের গহীন ভিতর-২২ - সৈয়দ শামসুল হক


এক্কেরে আওয়াজ নাই, নদী খালি চাপড় দিতাছে
গেরামের পিঠে আর ফিসফাস কইতাছে, ঘুম,
ঘুমারে এখনতরি সাতভাই পূর্বদিকে আছে।
এক ফোঁটা ঘুম যে আসে না তার আমি কি করুম?

পরানের গহীন ভিতর-২০ - সৈয়দ শামসুল হক


কি কামে দুফর বেলা পাতাগুলা উড়ায় বাতাস?
আবার সে কার স্বর মাঠাপাড়ে ফোঁপায় এমন?
কি কামে আমার চক্ষে পড়ে খালি মানুষের লাশ?
যা দ্যাখার দেইখাছি, বাকি আছে আর কি দ্যাখন?

পরানের গহীন ভিতর-১৯ - সৈয়দ শামসুল হক


পথের উপরে এক বাজপড়া তালগাছ খাড়া,
পিছের জঙ্গল থিকা কুড়ালের শব্দ শোনা যায়,
যমুনার জলে দ্যাখে নাও তার নিজের চেহারা,
বাতাসের কোলে মাথা কুশালের ফসল ঘুমায়,

পরানের গহীন ভিতর-১৫ - সৈয়দ শামসুল হক


আমারে সোন্দর তুমি কও নাই কোনো একদিন,
আমার হাতের পিঠা কও নাই কি রকম মিঠা,
সেই তুমি তোমারেই দিছি আমি যুবতীর চিন-
চোখ-কানা দেখ নাই বিছানায় আছে লাল-ছিটা?

পরানের গহীন ভিতর-১৩ - সৈয়দ শামসুল হক



তোমার বিয়ার দিন মনে হইল, সত্য নিও মনে,
এত বড় এত গোল কোনোদিন দেখি নাই চান।
তুলার মতন ফুল, রাণী য্যান দরবারে বসা,
নদী গহীন তলে জোছনায় দিয়া সে প্রাসাদ।

পরানের গহীন ভিতর-১৪ - সৈয়দ শামসুল হক


কি কামে মানুষ দ্যাখে মানুষের বুকের ভিতরে
নীল এক আসমান- তার তলে যমুনার ঢল,
যখন সে দেখে তার পরানের গহীন শিকড়ে
এমন কঠিন টান আচানক পড়ে সে চঞ্চল?

পরানের গহীন ভিতর- ১৭ - সৈয়দ শামসুল হক


এমন অদ্ভূতভাবে কথা কয়া ওঠে কে, আন্ধারে?-
য্যান এক উত্তরের ধলাহাঁস দক্ষিনের টানে
যাইতে যাইতে শ্যাষে শুকনা এক নদীর কিনারে
ডাক দিয়া ওঠে, ‘আগো, চেনা কেউ আছো কোনোখানে?’

পরানের গহীন ভিতর- ১৬ - সৈয়দ শামসুল হক


যমুনার পরে আসলে তার কথা খালি মনে হয়,
এমন পরান পড়ে- সব কিছু বিকাল-বিকাল,
লোকের চোহারা দেখি, হাত নাড়ে, নাড়ে তারা পাও,
কথা কয়, তাও বোঝা যায় না যে কি কয় কি কয়।

পরানের গহীন ভিতর- ২১ - সৈয়দ শামসুল হক


হাজার দক্ষিণ দিকে যাও তুমি গাঙ্গের মোহানা
পাও যদি কইও আমারে। আমি না অনেক দিন
আমার যৈবন আমি মোহানার খোঁজে না দিলাম,
তাও তারে দেখি নাই, শুনি আছে ধলা গাঙচিল,

পরানের গহীন ভিতর- ১৮ - সৈয়দ শামসুল হক


কেমন শব্দ এই, কেমন কথার আদব?
কাতারে কাতার খাড়া, আমি তার ভেদ বুঝি নাই।
নিজের চিন্তার পাখি উড়ায়া যে দিমু কি তাজ্জব,
খানিক হুকুম মানে, তারপর বেবাক নাজাই।
_