Showing posts with label নারীকেন্দ্রিক কবিতা. Show all posts
Showing posts with label নারীকেন্দ্রিক কবিতা. Show all posts

তেজ - দেবব্রত সিংহ


মু জামবনির কুঁইরি পাড়ার শিবু কুঁইরির বিটি সাঁঝলি বটে

কাগজওয়ালারা বইললেক,
উঁ অতটুকু বইললে হবেক কেনে?
তুমি এবারকার মাধ্যমিকে পত্থম হইছ
তোমাকে বইলতে হবেক আরো কিছু

কালো মেয়ের জন্যে পংক্তিমালা - শামসুর রাহমান

 
আমার নামধাম তোমার জানার দরকার নেই, কালো মেয়ে।
আমি শাদা কি কালো, হলদে কি বাদামি,
সবুজ কি বেগুনি
তাতে কী এসে যায়? রে নাও, আমার কোনো বর্ণ
নেই, আমি গোত্রহীন। বলা যায়, আমি শুধু
একটি কণ্ঠস্বর, যা মিশে থাকে ঘন কালো অরণ্যের
লতাপাতায়, ঝিলের টোল-খাওয়া পানিতে
হরিণের মুখ রাখার ভঙ্গিমায়,
উটের গলার ঘণ্টাধ্বনিতে। এই কণ্ঠস্বর
বয়ে যায় বিষুব রেখায়, উত্তর মেরুতে, বঙ্গোপসাগরের
তরঙ্গে তরঙ্গে আর আফ্রিকার
অজস্র জেব্রার খুরধ্বনিময় প্রান্তরে।

মৃণালের পত্র - দেবব্রত সিংহ



সেই ছুটুবেলাতে আমাদেপাহাড় কোলের জোড়ে
লদী পেরাতে যাইয়ে
এক আষাঢ় মাসের হড়কা বানে
আমি আর আমার ভাই
ভাস্যে গেছলম বানের তোড়ে
ভাইটি গেল ডুবে আমি উঠলম বাঁচে
পাড়ার লোকে বললেক
বিটিছেল্যার জীবন
যদি বেটাছেল্যা হতক
তাহলে কি বাঁচতক।

পাহাড়ি মেয়ে - সৌমেন অনন্ত


সেই মেয়েটার আকাশ কালো চুল ছিলো
খোপায় গোঁজা মাতাল করা ফুল ছিলো,
সেই মেয়েটার কাল সকালে স্কুল ছিলো,
আজ মেয়েটা সিলিং ফ্যানে ঝুলছিল
মেয়েটার মেয়ে হওয়াটাই ভুল ছিলো।

প্রাক্তন – জয় গোস্বামী

ঠিক সময়ে অফিসে যায়?
ঠিক মতো খায় সকালবেলা?
টিফিনবাক্স সঙ্গে নেয় কি?
না ক্যান্টিনেই টিফিন করে?
জামা কাপড় কে কেচে দেয়?
চা করে কে আগের মতো?
দুগগার মা ক’টায় আসে?
আমায় ভোরে উঠতে হত
সেই শার্টটা পরে এখন?
ক্যাটকেটে সেই নীল রঙ টা?
নিজের তো সব ওই পছন্দ
আমি অলিভ দিয়েছিলাম
কোন রাস্তায় বাড়ি ফেরে?
দোকানঘরের বাঁ পাশ দিয়ে
শিবমন্দির, জানলা থেকে
দেখতে পেতাম রিক্সা থামল
অফিস থেকে বাড়িই আসে?
নাকি সোজা আড্ডাতে যায়?
তাসের বন্ধু, ছাইপাঁশেরও
বন্ধুরা সব আসে এখন?
টেবিলঢাকা মেঝের ওপর
সমস্ত ঘর ছাই ছড়ানো
গেলাস গড়ায় বোতল গড়ায়
টলতে টলতে শুতে যাচ্ছে
কিন্তু বোতল ভেঙ্গে আবার
পায়ে ঢুকলে রক্তারক্তি
তখন তো আর হুঁশ থাকে না
রাতবিরেতে কে আর দেখবে।
কেন, ওই যে সেই মেয়েটা।
যার সঙ্গে ঘুরত তখন।
কোন মেয়েটা? সেই মেয়েটা?
সে তো কবেই সরে এসেছে!
বেশ হয়েছে, উচিত শাস্তি
অত কান্ড সামলাবে কে!
মেয়েটা যে গণ্ডগোলের
প্রথম থেকেই বুঝেছিলাম
কে তাহলে সঙ্গে আছে?
দাদা বৌদি? মা ভাইবোন!
তিন কূলে তো কেউ ছিল না
এক্কেবারে একলা এখন।
কে তাহলে ভাত বেড়ে দেয়?
কে ডেকে দেয় সকাল সকাল?
রাত্তিরে কে দরজা খোলে?
ঝক্কি পোহায় হাজার রকম?
কার বিছানায় ঘুমোয় তবে
কার গায়ে হাত তোলে এখন
কার গায়ে হাত তোলে এখন?

ভালোবাসি ভালোবাসি- সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


ধরো কাল তোমার পরীক্ষা, রাত জেগে পড়ার
টেবিলে বসে আছ,
ঘুম আসছে না তোমার
হঠাৎ করে ভয়ার্ত কণ্ঠে উঠে
আমি বললাম ভালবাস?
তুমি কি রাগ করবে?
নাকি উঠে এসে জড়িয়ে ধরে বলবে,
ভালবাসি, ভালবাসি...

শাড়ি – সুবোধ সরকার


বিয়েতে একান্নটা শাড়ি পেয়েছিল মেয়েটা
অষ্টমঙ্গলায় ফিরে এসে আরো ছটা
এতো শাড়ি একসঙ্গে সে জীবনে দেখেনি।

আলমারির প্রথম থাকে সে রাখলো সব নীল শাড়িদের
হালকা নীল একটা কে জড়িয়ে ধরে বলল, তুই আমার আকাশ

বাঁশিওয়ালা | রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর


ওগো বাঁশিওয়ালা,
   
বাজাও তোমার বাঁশি,
       
শুনি আমার নূতন নাম’-
এই বলে তোমাকে প্রথম চিঠি লিখেছি,
       
মনে আছে তো?
আমি তোমার বাংলাদেশের মেয়ে।
   
সৃষ্টিকর্তা পুরো সময় দেন নি
       
আমাকে মানুষ রে গড়তে,
       
রেখেছেন আধাআধি করে।
অন্তরে বাহিরে মিল হয় নি-
   
সেকালে আর আজকের কালে,
         
মিল হয় নি ব্যথায় আর বুদ্ধিতে,
       
মিল হয় নি শক্তিতে আর ইচ্ছায়।
আমাকে তুলে দেন নি যুগের পারানি নৌকোয়-
   
চলা আটক করে ফেলে রেখেছেন,
       
কালস্রোতের পারে বালুডাঙায়।

নিঃসঙ্গতা - আবুল হাসান



কেউ দেখেনি / অর্জুন মিত্র

 
কৃষ্ণকলি কেউ বলে না তাকে
কালো তাকে বলে পাড়ার লোক
মেঘলা কোথা, সব ক'টা দিন খরা
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ
বাপের তার নেইকো টাকা মোটে
অর্থ ছাড়া পাত্র কোথা জোটে?
কালো? তা সে যেমন কালো হোক
কেউ দেখে না কালো হরিণ চোখ।

নারী - কাজী নজরুল ইসলাম


সাম্যের গান গাই-
   আমার চক্ষে পুরুষ-রমণী কোনো ভেদাভেদ নাই!
   বিশ্বে যা-কিছু মহান্ সৃষ্টি চির-কল্যাণকর,
   অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর
   বিশ্বে যা-কিছু এল পাপ-তাপ বেদনা অশ্রুবারি,
   অর্ধেক তার আনিয়াছে নর, অর্ধেক তার নারী
   নরককুন্ড বলিয়া কে তোমা করে নারী হেয়-জ্ঞান?
   তারে বলো, আদি পাপ নারী নহে, সে যে নর-শয়তান
   অথবা পাপ যে-শয়তান যে-নর নহে নারী নহে,
   ক্লীব সে, তাই সে নর নারীতে সমান মিশিয়া রহে
   -বিশ্বে যত ফুটিয়াছে ফুল, ফলিয়াছে যত ফল,
   নারী দিল তাহে রূপ-রস-মধু-গন্ধ সুনির্মল
   তাজমহলের পাথর দেখেছ, দেখিয়াছে যত ফল,
   অন্তরে তার মোমতাজ নারী, বাহিরেতে শা-জাহান
   জ্ঞানের লক্ষ্মী, গানের লক্ষ্মী, শস্য লক্ষ্মী নারী,
   সুষমা-লক্ষ্মী নারীই ফিরিছে রূপে রূপে সঞ্চারি
   পুরুষ এনেছে যামিনী-শানি-, সমীরণ, বারিবাহ!
   দিবসে দিয়াছে শক্তি সাহস, নিশীতে য়েছে বধূ,
   পুরুষ এসেছে মরুতৃষা য়ে, নারী যোগায়েছে মধু
   শস্যক্ষেত্র উর্বর , পুরুষ চালাল হল,
   নারী সেই মাঠে শস্য রোপিয়া করিল সুশ্যামল
   নর বাহে হল, নারী বহে জল, সেই জল-মাটি মিশে
   ফসল হইয়া ফলিয়া উঠিল সোনালী ধানের শীষে

       স্বর্ণ-রৌপ্যভার,
   নারীর অঙ্গ-পরশ লভিয়া য়েছে অলঙ্কার
   নারীর বিরহে, নারীর মিলনে, নর পেল কবি-প্রাণ,
   যত কথা তার হইল কবিতা, শব্দ হইল গান
   নর দিল ক্ষুধা, নারী দিল সুধা, সুধায় ক্ষুধায় মিলে
   জন্ম লভিছে মহামানবের মহাশিশু তিলে তিলে!
   জগতের যত বড় বড় জয় বড় বড় অভিযান,
   মাতা ভগ্নী বধূদের ত্যাগে হইয়াছে মহীয়ান্
   কোন্ রণে কত খুন দিল নর লেখা আছে ইতিহাসে,
   কত নারী দিল সিঁথির সিঁদুর, লেখা নাই তার পাশে
   কত মাতা দিল হৃদয় উপড়ি কত বোন দিল সেবা,
   বীরের স্মৃতি-স্তম্ভের গায়ে লিখিয়া রেখেছে কেবা?
   কোনো কালে একা হয়নি জয়ী পুরুষের তরবারী,
   প্রেরণা দিয়াছে, শক্তি দিয়াছে বিজয় লক্ষ্মী নারী
   রাজা করিতেছে রাজ্য-শাসন, রাজারে শাসিছে রাণী,
   রাণীর দরদে ধুইয়া গিয়াছে রাজ্যের যত গ্লানি

    পুরুষ হৃদয়-হীন,
মানুষ করিতে নারী দিল তারে আধেক হৃদয় ঋণ
ধরায় যাঁদের যশ ধরে না অমর মহামানব,
বরষে বরষে যাঁদের স্মরণে করি মোরা উৎসব,
খেয়ালের বশে তাঁদের জন্ম দিয়াছে বিলাসী পিতা,-
লব-কুশে বনে ত্যজিয়াছে রাম, পালন রেছে সীতা
নারী সে শিখা শিশু-পুরুষেরে স্নেহ প্রেম দয়া মায়া,
দীপ্ত নয়নে পরা কাজল বেদনার ঘন ছায়া
অদ্ভুতরূপে পুরুষ পুরুষ করিল সে ঋণ শোধ,
বুকে রে তারে চুমিল যে, তারে করিল সে অবরোধ!
    তিনি নর-অবতার-
পিতার আদেশে জননীরে যিনি কাটেন হানি কুঠার
পার্শ্ব ফিরিয়া শুয়েছেন আজ অর্ধনারীশ্বর-
নারী চাপা ছিল এতদিন, আজ চাপা পড়িয়াছে নর
    সে যুগ হয়েছে বাসি,
যে যুগে পুরুষ দাস ছিল না , নারীরা আছিল দাসী!
বেদনার যুগ, মানুষের যুগ, সাম্যের যুগ আজি,
কেহ রহিবে না বন্দী কাহারও , উঠিছে ডঙ্কা বাজি
নর যদি রাখে নারীরে বন্দী, তবে এর পর যুগে
আপনারি রচা কারাগারে পুরুষ মরিবে ভুগে!
     যুগের ধর্ম এই-
পীড়ন করিলে সে পীড়ন এসে পীড়া দেবে তোমাকেই

    শোনো মর্ত্যের জীব!
অন্যেরে যত করিবে পীড়ন, নিজে হবে তত ক্লীব!
স্বর্ণ-রৌপ্য অলঙ্কারের যক্ষপুরীতে নারী
করিল তোমায় বন্দিনী, বল, কোন্ সে অত্যাচারী?
আপনারে আজ প্রকাশের তব নাই সেই ব্যাকুলতা,
আজ তুমি ভীরু আড়ালে থাকিয়া নেপথ্যে কও কথা!
চোখে চোখে আজ চাহিতে পার না; হাতে রুলি, পায় মল,
মাথার ঘোম্টা ছিঁড়ে ফেল নারী, ভেঙে ফেল -শিকল!
যে ঘোমটা তোমা করিয়াছে ভীরু, ওড়াও সে আবরণ,
দূর রে দাও দাসীর চিহ্ন, যেথা যত আভরণ!

        ধরার দুলালী মেয়ে,
ফির না তো আর গিরিদরীবনে পাখী-সনে গান গেয়ে
কখন আসিল প্নুটো যমরাজা নিশীথ-পাখায় উড়ে,
ধরিয়া তোমায় পুরিল তাহার আঁধার বিবর-পুরে!
সেই সে আদিম বন্ধন তব, সেই তে আছ মরি
মরণের পুরে; নামিল ধরায় সেইদিন বিভাবরী
ভেঙে যমপুরী নাগিনীর মতো আয় মা পাতাল ফুঁড়ি!
আঁধারে তোমায় পথ দেখাবে মা তোমারি ভগ্ন চুড়ি!
পুরুষ-যমের ক্ষুধার কুকুর মুক্ত পদাঘাতে
লুটায়ে পড়িবে চরন-তলে দলিত যমের সাথে!
এতদনি শুধু বিলালে অমৃত, আজ প্রয়োজন যবে,
যে-হাতে পিয়ালে অমৃত, সে-হাতে কূট বিষ দিতে হবে
   সেদিন সুদূর নয়-
যেদিন ধরণী পুরুষের সাথে গাহিবে নারীরও জয়!

 
_