Showing posts with label জীবন-সংগ্রামের কবিতা. Show all posts
Showing posts with label জীবন-সংগ্রামের কবিতা. Show all posts

আছর‍ ~ শেখর বরণ

 

  

নবীর শিক্ষা ‍‍~ শেখ হাবিবুর রহমান

 'তিন দিন হ'তে খাইতে না পাই, নাই কিছু মোরে ঘরে,
দারা পরিবার বাড়িতে আমার উপোস করিয়া মরে।
নাহি পাই কাজ তাই ত্যাজি লাজ বেড়াই ভিক্ষা করি,
হে দয়াল নবী, দাও কিছু মোরে নহিলে পরাণে মরি।'
আরবের নবী, করুণার ছবি ভিখারির পানে চাহি
কোমল কণ্ঠে কহিল, 'তোমার ঘরে কি কিছুই নাহি?'
বলিল সে, 'আছে শুধু মোর কাছে কম্বল একখানি।'
কহিল রসুল, 'এক্ষুণি গিয়া দাও তাহা মোরে আনি।'
সম্বল তার কম্বলখানি বেচিয়া তাহার করে
অর্ধেক দাম দিলেন রসুল খাদ্য কেনার তরে,
বাকি টাকা দিয়া কিনিয়া কুঠার হাতল লাগায়ে নিজে
কহিলেন, 'যাও কাঠ কেটে খাও, দেখ খোদা করে কি-যে।'
সেদিন হইতে শ্রম সাধনায় ঢালিল ভিখারি প্রাণ,
বনের কাষ্ঠ বাজারে বেচিয়া দিন করে গুজরান।
অভাব তাহার রহিল না আর, হইল সে সুখী ভবে,
নবীর শিক্ষা⁠— ক'রো না ভিক্ষা, মেহনত কর সবে।


 

ছন্নছাড়া - অচিন্ত্যকুমার সেনগুপ্ত

গলির মোড়ে একটা গাছ দাঁড়িয়ে।
গাছ না গাছের প্রেতচ্ছায়া।
আঁকাবাঁকা শুকনো কতগুলো কাঠের কঙ্কাল
শূন্যের দিকে এলোমেলো তুলে দেওয়া---
রুক্ষ, রুষ্ট, রিক্ত, জীর্ণ।
লতা নেই, পাতা নেই, ছায়া নেই, ছাল-বাকল নেই;
নেই কোথাও এক আঁচড় সবুজের প্রতিশ্রুতি,
এক বিন্দু সরসের সম্ভাবনা।
ঐ পথ দিয়ে জরুরী দরকারে যাচ্ছিলাম ট্যাক্সি করে।
ড্রাইভার বল্লে, 'ওদিকে যাব না।
দেখছেন না ছন্নছাড়া ক'টা বেকার ছোকরা
রাস্তার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আড্ডা দিচ্ছে।
চোঙা প্যান্ট, চোখা জুত, রোখা মেজাজ, ঢোকা কপাল।
ওখান দিয়ে গেলেই গাড়ি থামিয়ে লিফট চাইবে।
বলবে হাওয়া খাওয়ান।'

এইটুকু জীবন - রবার্ত রোজদেস্তভেনস্কি

নিষ্করুণভাবে ছোট্ট
এইটুকু
পৃথিবীতে
বাস করত
এক ছোট্ট এইটুকু মানুষ।
তার ছিলো একটা ছোট্ট
এইটুকু
কাজ।

আর খুবই ছোট্ট
এইটুকু
থলি।

মাস গেলে পেত এইটুকু
একটু মাইনে......
কিন্তু একদিন
এক ফুটফুটে সকালে
তার জানালায়
টোকা পড়লো।

তাকে ডেকে নিয়ে গেলো ছোট্ট
এইটুকু
যুদ্ধু
কিংবা
হয়ত সেই রকমি তার মনে হয়ে থাকবে।

তাকে দেয়া হল একটা ছোট্ট
এইটুকু
কামান
একজোড়া ছোট্ট
এইটুকু
বুট।
মাথায় পরবার একটা ছোট্ট
এইটুকু
টুপি
গায়ে দেবার একটা ছোট্ট
এইটুকু মাপের
ওভারকোট।...

...আর যখন সে মাটিতে পড়ে গেল
বিচ্ছিরিভাবে, অন্যায়ভাবে
আক্রমণের রণধ্বনিতে
দাঁতমুখ খিঁচিয়ে
টলটলে শিশিরের মাথা ছাড়িয়ে
জ্বলজ্বল করতে থাকত তার মুখচ্ছবি...

কিন্ত সারা পৃথিবী ঢুঁড়েও
তার জন্যে
এমন পাথর খুঁজে পাওয়া গেল না
যা দিয়ে
জীবনের মত বড়
তার কোন প্রমাণসই মূর্তি খাড়া করা যায়।
 

 

দারিদ্র্যরেখা – তারাপদ রায়

আমি নিতান্ত গরীব ছিলাম, খুবই গরীব।
আমার ক্ষুধার অন্ন ছিল না,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় ছিল না,
আমার মাথার উপরে আচ্ছাদন ছিল না।
অসীম দয়ার শরীর আপনার,
আপনি এসে আমাকে বললেন,
না, গরীব কথাটা খুব খারাপ,
ওতে মানুষের মর্যাদা হানি হয়,
তুমি আসলে দরিদ্র।

অপরিসীম দারিদ্র্যের মধ্যে আমার কষ্টের দিন,
আমার কষ্টের দিন, দিনের পর দিন আরশেষ হয় না,
আমি আরো জীর্ণ আরো ক্লিষ্ট হয়ে গেলাম।
হঠাৎ আপনি আবার এলেন, এসে বললেন,
দ্যাখো, বিবেচনা করে দেখলাম,
দরিদ্র শব্দটিও ভালো নয়, তুমি হলে নিঃস্ব।

দীর্ঘ নিঃস্বতায় আমার দিন রাত্রি,
গনগনে গরমে ধুঁকতে ধুঁকতে,
শীতের রাতের ঠাণ্ডায় কাঁপতে কাঁপতে,
বর্ষার জলে ভিজতে ভিজতে,
আমি নিঃস্ব থেকে নিঃস্বতর হয়ে গেলাম।
আপনার কিন্তু ক্লান্তি নেই,
আপনি আবার এলেন, আপনি বললেন,
তোমার নিঃস্বতার কোনো মানে হয় না,
তুমি নিঃস্ব হবে কেন,
তোমাকে চিরকাল শুধু বঞ্চনা করা হয়েছে,
তুমি বঞ্চিত, তুমি চিরবঞ্চিত।

আমার বঞ্চনার অবসান নেই,
বছরের পর বছর আধপেটা খেয়ে,
উদোম আকাশের নিচে রাস্তায় শুয়ে,
কঙ্কালসার আমার বেঁচে থাকা।
কিন্তু আপনি আমাকে ভোলেননি,
এবার আপনার মুষ্টিবদ্ধ হাত,
আপনি এসে উদাত্ত কণ্ঠে ডাক দিলেন,
জাগো, জাগো সর্বহারা।

তখন আর আমার জাগবার ক্ষমতা নেই,
ক্ষুধায় অনাহারে আমি শেষ হয়ে এসেছি,
আমার বুকের পাঁজর হাঁপরের মতো ওঠানামা করছে,
আপনার উৎসাহ ও উদ্দীপনার সঙ্গে
আমি তাল মেলাতে পারছি না।

ইতিমধ্যে আরো বহুদিন গিয়েছে,
আপনি এখন আরো বুদ্ধিমান,
আরো চৌকস হয়েছেন।
এবার আপনি একটি ব্ল্যাকবোর্ড নিয়ে এসেছেন,
সেখানে চকখড়ি দিয়ে যত্ন করে
একটা ঝকঝকে লম্বা লাইন টেনে দিয়েছেন।
এবার বড় পরিশ্রম হয়েছে আপনার,
কপালের ঘাম মুছে আমাকে বলেছেন,
এই যে রেখা দেখছো, এর নিচে,
অনেক নিচে তুমি রয়েছো।

চমৎকার!
আপনাকে ধন্যবাদ, বহু ধন্যবাদ!
আমার গরীবপনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার দারিদ্র্যের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার নিঃস্বতার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার বঞ্চনার জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আমার সর্বহারাত্বের জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ,
আর সবশেষে ওই ঝকঝকে লম্বা রেখাটি,
ওই উজ্জ্বল উপহারটির জন্যে আপনাকে ধন্যবাদ।

কিন্তু,
ক্রমশ,
আমার ক্ষুধার অন্ন এখন আরো কমে গেছে,
আমার লজ্জা নিবারণের কাপড় এখন আরো ছিঁড়ে গেছে,
আমার মাথার ওপরের আচ্ছাদন আরো সরে গেছে।
কিন্তু ধন্যবাদ,
হে প্রগাঢ় হিতৈষী, আপনাকে বহু ধন্যবাদ!

লড়ছি সবাই – শামসুর রাহমান


মিশমিশে ঘোর অন্ধকারে
কনুই দিয়ে ধাক্কা মারে,
রহিম পড়ে রামের ঘাড়ে,
কেউবা দেখি চুপিসারে
অন্য কারুর জায়গা কাড়ে,
পাচ্ছি তা টের হাড়ে হাড়ে।
লাইন থেকে সরছি ক্রমে সরছি।

সোনার মেডেল - পূর্ণেন্দু পত্রী

বাবুমশাইরা
গাঁগেরাম থেকে ধুলোমাটি ঘসটে ঘসটে
আপনাদের কাছে এয়েচি।
কি চাকচিকন শহর বানিয়েছেন গো বাবুরা
রোদ পড়লে জোছনা লাগলে মনে হয়
কাল-কেউটের গা থেকে খসেপড়া
রুপোর তৈরি একখান্ লম্বা খোলস।
মনের উনোনে ভাতের হাঁড়ি হাঁ হয়ে আছে খিদেয়
চালডাল তরিতরকারি শাকপাতা কিছু নেই
কিন্তু জল ফুটছে টগবগিয়ে।
 
বাবুমশাইরা,
লোকে বলেছিল, ভালুকের নাচ দেখালে
আপনারা নাকি পয়সা দেন!
যখন যেমন বললেন, নেচে নেচে হদ্দ।
পয়সা দিবেন নি?
লোকে বলেছিল ভানুমতীর খেল দেখালে
আপনারা নাকি সোনার ম্যাডেল দেন।
নিজের করাতে নিজেকে দুখান করে
আবার জুড়ে দেখালুম,
আকাশ থেকে সোনালি পাখির ডিম পেড়ে
আপনাদের ভেজে খাওয়ালুম গরম ওমলেট,
বাঁজা গাছে বাজিয়ে দিলুম ফুলের ঘুঙুর।
সোনার ম্যাডেল দিবেন নি?

বাবুমশাইরা
সেই ল্যাংটোবেলা থেকে বড় শখ
ঘরে ফিরবো বুকে সোনার ম্যাডেল টাঙিয়ে
আর বৌ-বাচ্চাদের মুখে
ফাটা কাপাসতুলোর হাসি ফুটিয়ে বলবো
দেখিস্! আমি মারা গেলে
আমার গা থেকে গজাবে
চন্দন-গন্ধের বন।
সোনার ম্যাডেল দিবেন নি?


আমি জেলে যাবার পর – নাজিম হিকমত - অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায়



 

জেলখানার চিঠি - নাজিম হিকমত - অনুবাদ : সুভাষ মুখোপাধ্যায়







মৃণালের পত্র - দেবব্রত সিংহ



সেই ছুটুবেলাতে আমাদেপাহাড় কোলের জোড়ে
লদী পেরাতে যাইয়ে
এক আষাঢ় মাসের হড়কা বানে
আমি আর আমার ভাই
ভাস্যে গেছলম বানের তোড়ে
ভাইটি গেল ডুবে আমি উঠলম বাঁচে
পাড়ার লোকে বললেক
বিটিছেল্যার জীবন
যদি বেটাছেল্যা হতক
তাহলে কি বাঁচতক।

জলতরঙ্গ - অরণি বসু


আমাদের টেলিফোন নেই, ফ্রিজ নেই, জলতরঙ্গ আছে।
আমাদের গ্রীষ্মকালীন দার্জিলিং নেই, গাড়িবারান্দা নেই, জলতরঙ্গ আছে।
জলতরঙ্গ বলতে তোমরা কি ভাবছো জানি না,
আমাদের জলতরঙ্গটা মাত্র সাড়ে সাত টাকার,
আমার ছেলের প্রথম জন্মদিনে আমি উপহার দিয়েছিলুম।

জন্মদিন – শুভ দাশগুপ্ত


আজ পয়লা শ্রাবণ।
খোকন, আজ তোর জন্মদিন।
তুই যখন জন্মেছিলি, আমরা তখন যাদবপুরে
নতুন গড়ে ওঠা কলোনীর টালির ঘরে
তোর ইস্কুল মাস্টার বাবা
সেই হ্যারিকেনের আলো জ্বলা ঘরেই
আনন্দে আর খুশিতে ঝলমলে হয়ে উঠেছিলেন
তুই আসার পর। তোর নাম রেখেছিলেন- সুকল্যাণ।
মানুষটার মনটা ছিল শিশুর মতন
অভাবে অনটনে, বেঁচে থাকার নানা দুর্বিপাকেও
ভেঙ্গে পড়তেন না কখনও। সকলের ভাল চাইতেন মন থেকে।
বলতেন দেখো একদিন এই দেশের মানুষ
ঠিক খুঁজে পাবে মুক্তির পথ। শোষণ থেকে মুক্তি
দারিদ্র থেকে মুক্তি অশিক্ষা থেকে মুক্তি

যমুনাবতী – শঙ্খ ঘোষ


[One more unfortunate
Weary of breath
Rashly importunate
Gone to her death. – Thomas Hood]

 
নিভন্ত এই চুল্লীতে মা
একটু আগুন দে
আরেকটু কাল বেঁচেই থাকি
বাঁচার আনন্দে।
নোটন নোটন পায়রাগুলি
খাঁচাতে বন্দী
দুএক মুঠো ভাত পেলে তা
ওড়াতে মন দি

রূপম – সুবোধ সরকার

রূপমকে একটা চাকরি দিনএম. পাস, বাবা নেই
আছে প্রেমিকা সে আর দু-এক মাস দেখবে, তারপর
নদী এপার থেকে নদী ওপারে গিয়ে বলবে, রূপম
আজ চলি
তোমাকে মনে থাকবে চিরদিন
রূপমকে একটা চাকরি দিন, যে কোন কাজ
পিওনের কাজ হলেও চলবে |

জোনাকি | বুদ্ধদেব বসু


 
এ কী
জোনাকি!
তুই কখন
এলি বল তো!
একলা
এই বাদলায়
কেন কলকা-
তায় এলি তুই?
[এই সারারাত জ্বলা চিরদ্বীপমালা
দেয়ালি-আলোয়!]
তোর সঙ্গী
সব পাড়াগাঁর
পথে সারা-রাত
ঘন অন্ধ
কারে জ্বলছে।

কাস্তে - দিনেশ দাশ



ভাত দে হারামজাদা | রফিক আজাদ


ভীষণ ক্ষুধার্ত আছিঃ উদরে, শরীরবৃত্ত ব্যেপে
অনুভূত হতে থাকে- প্রতিপলে- সর্বগ্রাসী ক্ষুধা
অনাবৃষ্টি- যেমন চৈত্রের শষ্যক্ষেত্রে- জ্বেলে দ্যায়
প্রভুত দাহন- তেমনি ক্ষুধার জ্বালা, জ্বলে দেহ
দুবেলা দুমুঠো পেলে মোটে নেই অন্য কোন দাবী
অনেকে অনেক কিছু চেয়ে নিচ্ছে, সকলেই চায়ঃ
বাড়ি, গাড়ি, টাকা কড়ি- কারো বা খ্যাতির লোভ আছে

প্রিয়তমাসু | সুকান্ত ভট্টাচার্য

সীমান্তে আজ আমি প্রহরী।
অনেক রক্তাক্ত পথ অতিক্রম 'রে
আজ এখানে এসে থমকে দাড়িয়েছি-
স্বদেশের সীমানায়।

দূসর তিউনিসিয়া থেকে স্নিগ্ধ ইতালী,
স্নিগ্ধ ইতালী থেকে ছুটে গেছি বিপ্লবী ফ্রান্সে
নক্ষত্রনিয়ন্ত্রিত নিয়তির মতো
দুর্নিবার, অপরাহত রাইফেল হাতে;
-
ফ্রান্স থেকে প্রতিবেশী বার্মাতেও।
_