Showing posts with label আবৃত্তি. Show all posts
Showing posts with label আবৃত্তি. Show all posts

পরানের গহীন ভিতর- ৩৩ - সৈয়দ শামসুল হক



এমন বৃক্ষ কি নাই ডালে যার নাই কোনো পরী,
এমন নদী কি নাই জলে যার পড়ে না চেহারা,
এমন যাত্রা কি নাই যাতে নাই পরনের তরী,
এমন ডুলি কি নাই যাতে নাই নিষেধের ঘেরা,

পরানের গহীন ভিতর-১২ - সৈয়দ শামসুল হক


উঠানের সেই দিকে আন্ধারের ইয়া লম্বা লাশ,
শিমের মাচার নিচে জোছনার সাপের ছলম,
পরীরা সন্ধান করে যুবতীর ফুলের কলম,
তারার ভিতরে এক ধুনকার ধুনায় কাপাশ,
আকাশে দোলায় কার বিবাহের রুপার বাসন,
গাবের বাবরি চুল আলখেল্লা পরা বয়াতির,
গাভির ওলান দিয়া ক্ষীণ ধারে পড়তাছে ক্ষীর,
দুই গাঙ্গ এক হয়া যাইতাছে- কান্দন, হাসন।
একবার আসবা না?- তোমারেও ডাক দিতে আছে
যে তুমি দুঃখের দিকে একা একা যোজন গিয়াছো?
একবার দেখবা না তোমারেও ডাক দিতে আছে
যে তুমি আঘাত নিয়া সারাদিন কি তফাত আছো?
যে নাই সে নাই সই, তাই সই, যা আছে তা আছে,
এমন পুন্নিমা আইজ, কোন দুঃখে দুয়ার দিয়াছো?

পরানের গহীন ভিতর-১০ - সৈয়দ শামসুল হক


কে য্যান কানতে আছে- তার শব্দ পাওয়া যায় কানে,
নদীও শুকায়া যায়, আকালের বাতাস ফোঁপায়,
মানুষেরা বাড়িঘর বানায় না আর এই খানে,
গোক্ষুর লতায়া ওঠে যুবতীর চুলের খোঁপায়।

পরানের গহীন ভিতর-৯ - সৈয়দ শামসুল হক


একবার চাই এক চিক্কুর দিবার, দিমু তয়?
জিগাই কিসের সুখে দুঃখ নিয়া তুমি কর ঘর?
আঙিনার পাড়ে ফুলগাছ দিলে কি সোন্দর হয়,
দুঃখের কুসুম ঘিরা থাকে যার, জীয়ন্তে কবর

পরানের গহীন ভিতর-৭ - সৈয়দ শামসুল হক


নদীর কিনারে গিয়া দেখি নাও নিয়া গ্যাছে কেউ
অথচ এই তো বান্ধা আছিল সে বিকাল বেলায়।
আমার অস্থির করে বুঝি না কে এমন খেলায়,
আমার বেবাক নিয়া শান্তি নাই, পাচে পাছে ফেউ।
পানির ভিতরে য্যান ঘুন্নি দিয়া খিলখিল হাসে
যত চোর যুবতীরা, গ্যারামের শ্যাষ সীমানায়
বটের বৈরাগী চুল, ম্যাঘে চিল হারায় বারায়,
বুকের ভিতরে শিস দিয়া সন্ধা হাঁটে আশেপাশে।
এখন কোথায় যাই, এইখানে বড় সুনসান,
মানুষের দুঃখ আছে, জগতের আছে কিনা জানি না-
জগৎ এমনভাবে হয়া যায় হঠাৎ অচিনা।
মনে হয় আমার থিকাও একা বৃক্ষের পরান,
আমার থিকাও দুঃখী যমুনার নদীর কিনার।
আমার তো গ্যাছে এক, কত কোটি লক্ষ গ্যাছে তার।।

পরানের গহীন ভিতর-২ - সৈয়দ শামসুল হক


আন্ধার তোরঙ্গে তুমি সারাদিন কর কি তালাশ?
মেঘের ভিতর তুমি দ্যাখ কোন পাখির চক্কর?
এমন সরল পথ তবু ক্যান পাথরে টক্কর?
সোনার সংসার থুয়া পাথারের পরে কর বাস?

পরানের গহীন ভিতর-১ - সৈয়দ শামসুল হক


জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷

মনে থাকবে? - আরণ্যক বসু



পরের জন্মে বয়স যখন ষোলোই সঠিক
আমরা তখন প্রেমে পড়বো
মনে থাকবে?

বুকের মধ্যে মস্ত বড় ছাদ থাকবে
শীতলপাটি বিছিয়ে দেব;
সন্ধে হলে বসবো দুজন।
একটা দুটো খসবে তারা
হঠাৎ তোমার চোখের পাতায় তারার চোখের জল গড়াবে
ক্লান্ত কবির গান গাইবে
তখন আমি চুপটি রে দুচোখ রে থাকবো চেয়ে
মনে থাকবে?

পাহাড় চূড়ায় - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


অনেকদিন থেকেই আমার একটা পাহাড় কেনার শখ। কিন্তু পাহাড় কে বিক্রি করে তা জানি না। যদি তার দেখা পেতাম, দামের জন্য আটকাতো না। আমার নিজস্ব একটা নদী আছে, সেটা দিয়ে দিতাম পাহাড়টার বদলে। কে না জানে, পাহাড়ের চেয়ে নদীর দামই বেশী। পাহাড় স্থাণু, নদী বহমান। তবু আমি নদীর বদলে পাহাড়টাই কিনতাম। কারণ, আমি ঠকতে চাই।

নদীটাও অবশ্য কিনেছিলাম একটা স্বপ্নের বদলে। ছেলেবেলায় আমার বেশ ছোটোখাটো, ছিমছাম। একটা দ্বীপ ছিল। সেখানে অসংখ্য প্ৰজাপতি। শৈশবে দ্বীপটি ছিল বড় প্ৰিয়।

আমার যৌবনে দ্বীপটি আমার আমার কাছে মাপে ছোট লাগলো। প্রবহমান ছিপছিপে তখী নদীটি বেশ পছন্দ হলো আমার। বন্ধুরা বললো, ঐটুকু একটা দ্বীপের বিনিময়ে এতবড় একটা নদী পেয়েছিস? খুব জিতেছিস তো মাইরি! তখন জয়ের আনন্দে আমি বিহ্বল হতাম। তখন সত্যিই আমি ভালোবাসতন্ম নদীটিকে।

নদী আমার অনেক প্রশ্নের উত্তর দিত। যেমন, বলে তো, আজ সন্ধেবেলা বৃষ্টি হবে কিনা?

সে বলতো, আজ এখানে দক্ষিণ গরম হাওয়া। শুধু একটি ছোট্ট দ্বীপে বৃষ্টি, সে কী প্রবল বৃষ্টি, যেন একটা উৎসব!

আমি সেই দ্বীপে আর যেতে পারি না, সে জানতো! সবাই জানে। শৈশবে আর ফেরা যায় না।

এখন আমি একটা পাহাড় কিনতে চাই। সেই পাহাড়ের পায়ের কাছে থাকবে গহন অরণ্য, আমি সেই অরণ্য পার হয়ে যাবো, তারপর শুধু রুক্ষ কঠিন পাহাড়। একেবারে চূড়ায়, মাথার খুব কাছে আকাশ, নিচে বিপুল পৃথিবী, চরাচরে তীব্র নির্জনতা। আমার কণ্ঠস্বর সেখানে কেউ শুনতে পাবে না। আমি ঈশ্বর মানি না, তিনি আমার মাথার কাছে ঝুঁকে দাঁড়াবেন না। আমি শুধু দশ দিককে উদ্দেশ্য করে বলবো, প্রত্যেক মানুষই অহঙ্কারী, এখানে আমি একা—এখানে আমার কোনো অহঙ্কার নেই। এখানে জয়ী হবার বদলে ক্ষমা চাইতে ভালো লাগে। হে দশ দিক, আমি কোনো দোষ করিনি। আমাকে ক্ষমা করো।

ভয় পেয়ো না - সুকুমার রায়



ভয় পেয়ো না, ভয় পেয়ো না, তোমায় আমি মারব না
সত্যি বলছি কুস্তি 'রে তোমার সঙ্গে পারব না।
মনটা আমার বড্ড নরম, হাড়ে আমার রাগটি নেই,
তোমায় আমি চিবিয়ে খাব এমন আমার সাধ্যি নেই!

গন্ধ বিচার - সুকুমার রায়

আবৃত্তি: আরিফ শামসুল

সিংহাসনে বস্‌ল রাজা বাজল কাঁসর ঘণ্টা,
ছট্‌ফটিয়ে উঠ্‌ল কেঁপে মন্ত্রীবুড়োর মনটা ।
বল্‌‌লে রাজা, "মন্ত্রী, তোমার জামায় কেন গন্ধ ?"
মন্ত্রী বলে, "এসেন্স দিছি- গন্ধ ত নয় মন্দ !"
রাজা বলে, "মন্দ ভালো দেখুক শুঁকে বদ্যি, "
বদ্যি বলে, "আমার নাকে বেজায় হল সর্দি ।"
রাজা হাঁকেন, "বোলাও তবে— রাম নারায়ণ পাত্র ।"
পাত্র বলে, "নস্যি নিলাম এক্ষনি এইমাত্র—
নস্যি দিয়ে বন্ধ যে নাক, গন্ধ কোথায় ঢুকবে ?"
রাজা বলেন, "কোটাল তবে এগিয়ে এস, শুঁকবে ।"
কোটাল কহে, "পান খেয়েছি মশলা তাহে কর্পূর,
গন্ধে তারি মুণ্ডু আমার এক্কেবারে ভরপুর ।"
রাজা বলেন, "আসুক তবে শের পালোয়ান ভীমসিং,"
ভীম বলে, "আজ কচ্ছে আমার সমস্ত গা ঝিম্‌ ঝিম্‌ ।
রাত্রে আমার বোখার হল, বল্‌ছি হুজুর ঠিক বাৎ"—
ব'লেই শুল রাজসভাতে চক্ষু বুজে চিৎপাত ।
রাজার শালা চন্দ্রকেতু তারেই ধ'রে শেষটা
বল্‌ল রাজা, "তুমিই না হয় কর না ভাই চেষ্টা ।"
চন্দ্র বলেন, "মারতে চাও ত ডাকাও না হয় জল্লাদ,
গন্ধ শুঁকে মর‌‌তে হবে এ আবার কি আহ্লাদ ?"
ছিল হাজির বৃদ্ধ নাজির বয়সটি তার নব্বই,
ভাব্‌‌লে মনে, "ভয় কেন আর একদিন তো মরবই—"
সাহস ক'রে বল্‌‌লে বুড়ো, "মিথ্যে সবাই বক্‌‌ছিস,
শুঁকতে পারি হুকুম পেলে এবং পেলে বক্‌‌শিস ।"
রাজা বলেন, "হাজার টাকা ইনাম পাবে সদ্য,"
তাই না শুনে উৎসাহেতে উঠ্‌ল বুড়ো মদ্দ ।
জামার পরে নাক ঠেকিয়ে- শুঁক্‌ল কত গন্ধ,
রইল অটল, দেখ্‌‌লে লোকে বিস্ময়ে বাক্‌ বন্ধ ।
রাজ্যে হল জয় জয়কার বাজ্‌ল কাঁসর ঢক্কা,
বাপ্‌‌রে কি তেজ বুড়োর হাড়ে, পায় না সে যে অক্কা !

কাজের লোক - সুকুমার রায়





প্রথম
বাঃ- আমার নাম 'বাঃ',
বসে থাকি তোফা তুলে পায়ের উপর পা !
লেখাপড়ার ধার ধারিনে, বছর ভরে ছুটি,
হেসে খেলে আরাম 'রে দুশো মজা লুটি
কারে কবে কেয়ার করি, কিসের করি ডর ?
কাজের নামে কম্প দিয়ে গায়ে আসে জ্বর
গাধার মত খাটিস্তোরা মুখটা করে চুন-
আহাম্মুকি কাণ্ড দেখে হেসেই আমি খুন
সকলে
আস্ত একটি গাধা তুমি স্পষ্ট গেল দেখা,
হাস্ যত, কান্না তত কপালেতে লেখা
_