কাজের লোক - সুকুমার রায়





প্রথম
বাঃ- আমার নাম 'বাঃ',
বসে থাকি তোফা তুলে পায়ের উপর পা !
লেখাপড়ার ধার ধারিনে, বছর ভরে ছুটি,
হেসে খেলে আরাম 'রে দুশো মজা লুটি
কারে কবে কেয়ার করি, কিসের করি ডর ?
কাজের নামে কম্প দিয়ে গায়ে আসে জ্বর
গাধার মত খাটিস্তোরা মুখটা করে চুন-
আহাম্মুকি কাণ্ড দেখে হেসেই আমি খুন
সকলে
আস্ত একটি গাধা তুমি স্পষ্ট গেল দেখা,
হাস্ যত, কান্না তত কপালেতে লেখা
দ্বিতীয়
'যদি' বলে ডাকে আমায় নামটি আমার 'যদি'-
আশায় আশায় বসে থাকি হেলান দিয়ে গদি
সব কাজেতে থাকত যদি খেলার মত মজা,
লেখাপড়া হত যদি জলের মত সোজা-
স্যান্ডো সমান ষণ্ডা হতাম যদি গায়ের জোরে,
প্রশংসাতে আকাশ পাতাল যদি যেত ভরে-
উঠে পড়ে লেগে যেতাম বাজে তর্ক ফেলে
করতে পারি সবি- যদি সহজ উপায় মেলে
সকলে
হাতের কাছে সুযোগ, তবু 'যদি' আশায় বসে
নিজের মাথা খাচ্ছ বাপু নিজের বুদ্ধি দোষে
তৃতীয়
আমার নাম 'বটে' ! আমি সদাই আছি চটে-
কট্মটিয়ে তাকাই যখন, সবাই পালায় ছুটে
চশমা পরে বিচার 'রে, চিরে দেখাই চুল-
উঠ্তে বস্তে কচ্ছে সবাই হাজার গণ্ডা ভুল
আমার চোখে ধুলো দেবে সাধ্যি আছে কার ?
ধমক শুনে ভূতের বাবা হচ্ছে পগার পার !
হাস্ ? বটে ! ভাবছ বুঝি মস্ত তুমি লোক,
একটি আমার ভেংচি খেলে উল্টে যাবে চোখ
সকলে
দিচ্ছ গালি, লোকের তাতে কিবা এল গেল ?
আকাশেতে থুতু ছুঁড়ে- নিজের গায়েই ফেল
চতুর্থ
আমার নাম 'কিন্তু', আমায় 'কিন্তু' বলে ডাকে,
সকল কাজে একটা কিছু গলদ লেগে থাকে
দশটা কাজে লাগি কিন্তু আটটা করি মাটি,
ষোল আনা কথায় কিন্তু সিকি মাত্র খাঁটি
লম্ফ ঝম্ফ বহুৎ কিন্তু কাজের নাইকো ছিরি-
ফোঁস্'রে যাই তেড়ে- আবার ল্যাজ গুটিয়ে ফিরি
পাঁচটা জিনিস গড়্তে গেলে, দশটা ভেঙে চুর-
বল্দেখি ভাই কেমন আমি সাবাস বাহাদূর !
সকলে
উচিত তোমায় বেঁধে রাখা নাকে দিয়ে দড়ি,
বেগারখাটা পণ্ডকাজের মূল্য কানাকড়ি
পঞ্চম
আমার নাম 'তবু', তোমরা কেউ কি আমায় চেনো ?
দেখ্তে ছোট তবু আমার সাহস আছে জেনো
এতটুকু মানুষ তবু দ্বিধা নাইকো মনে,
যে কাজেতেই লাগি আমি খাটি প্রাণপণে
এমনি আমার জেদ, যখন অঙ্ক নিয়ে বসি,
একুশ বারে না হয় যদি, বাইশ বারে কষি
হাজার আসুক বাধা তবু উৎসাহ না কমে,
হাজার লোকে চোখ রাঙালে তবু না যাই 'মে
সকলে
নিষ্কম্মারা গেল কোথা, পালাল কোন দেশে ?
কাজের মানুষ কারে বলে দেখুন এখন এসে
হেসে খেলে, শুয়ে বসে কত সময় যায়,
সময়টা যে কাজে লাগায়, চালাক বলে তায়
 


_