কাঁটা - সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়


তোমার পায়ে কাঁটা ফুটেছিল। টিটলাগড়ে আলপথে। তখন সন্ধ্যা ঝুঁকে পড়েছে। তুমি উ: বলতেই আমি বললাম, দাঁড়াও, নড়ো না। তোমার পায়ে আমি হাত দেবো, এ জন্য তোমার লজ্জা! তোমার পা তো ফাটা ফাটা নয়, লজ্জা কি! তোমার পা কোদালের মতন বিশ্রী নয়। নরম এবং যতটা ছোট হলে মানায়। জাপানি মেয়ের মতন খুব নরম,খুব ছোট নয়, অবশ্য কোন জাপানি মেয়ের পা আমি এ পর্যন্ত ছুঁইনি যদিও।

আমি মাটিতে বসে, হাতে তোমার পা।তুমি দাঁড়িয়ে একটু বেঁকে,
শরীরের ভঙ্গি জিজ্ঞাসা চিহ্নের মতন।তোমার লাল টুকটুকে চটি, পায়ের পাতাও লালচে।

কোথায় ব্যথা?
যেখানে কাঁটা ফুটেছে।
কোথায় কাঁটা?
আমি জানি না।

ঠিক, কাঁটার কথা আমারই জানা উচিত।

আমি তোমার পাঁয়ে হাত বুলোতে লাগলাম।

উ: দেখ, কোথায় কাঁটা!
এই তো দেখছি।

আমি সত্যই দেখছিলাম,দু'হাতের মূঠোয় তোমার নরম যতটা ছোট হলে মানায় পায়ের পাতাটি ধরে টিটলাগড়ের সেই অবনত সন্ধ্যায় আমি গভীরভাবে দেখছিলাম। কাঁটা দেখিনি, দেখেছি গোলাপি সৌন্দর্য। কিন্ত কাঁটা খুঁজতেই হবে, নইলে তোমার পায়ে হবে ব্যথা। বিষ। এই তো এখানে , খুব ছোট, প্রায় দেখাই যায় না। এত ছোট কাঁটা, হাত দিয়ে তোলা যায় না। ঠোঁট দিয়ে তোলার জন্য আমি তোমার পদ চুম্বন করলাম।
তুমি এই অসভ্য বলে আমার মাথায় হাত রাখলে,

দেবী মূর্তির মতন ভঙ্গি।

তুমি এখন স্বাধীন স্বাস্থ্যবান পায়ে অন্য পৃথিবীতে ঘুরে বেড়াও।
আমি তোমাকে আর দেখি না।তুমি আমার দেখাও চাও না। জানি না, তোমার পদতল এখনও গোলাপি কিনা।

কিন্তু সেই ছোট কাঁটাটা আমি রেখে দিয়েছি,
খুব গোপনে, খুব ভেতরে, লুকিয়ে।
প্রায়ই টের পাই।
_