Showing posts with label শিশুতোষ ছড়া/কবিতা. Show all posts
Showing posts with label শিশুতোষ ছড়া/কবিতা. Show all posts

গাধার কান ~ রোকনুজ্জামান খান

 একটা দড়ির দু'দিক থেকে টানছে দু'দল ছেলে
তাই না দেখে বনের বানর লাফায় খেলা ফেলে।
সকল বানর ফন্দি আঁটে জবর মজার খেলা
এমন খেলা খেলেই সবাই কাটিয়ে দেব বেলা।
কিন্তু দড়ি মিলবে কোথায়? ঘাবড়ে গেল মাথা
পালের সেরা বানর বলে মগজ তোদের যা-তা।
নেইকো দড়ি বয়েই গেল ভাবিস মিছে হাবা
লেজে লেজে ধরব টেনে হবে দড়ির বাবা।
যেই না বলা দু'দল বানর দু'দিক থেকে বসে
একের লেজটি ধরল টেনে জোরসে চেপে কষে।
বনের গাধা দাঁড়ায় মাঝে উঁচিয়ে দু'টি কান
বলে, আমার দু'দিক থেকে কান ধরে দে টান
কান ধরে এই মাথা নিবি আপন দলে টেনে
জিতবি তবে এই খেলাতে, রাখিস সবাই জেনে।
অমনি দু'দল হেঁইয়ো টানে- গাধার বিপদ ভারি
কান ছিঁড়ে সব হুমড়ি খেয়ে পড়ল সারি সারি
সাঙ্গ হল দড়ির খেলা বানররা সব হাসে
কান হারিয়ে গাধা শুধুই চোখের জলে ভাসে।


 

 বাক বাক্‌ কুম পায়রা - রোকনুজ্জামান খান

বাক বাক্‌ কুম পায়রা
মাথায় দিয়ে টায়রা
বউ সাজবে কাল কি
চড়বে সোনার পালকি।

খুকু ও খোকা - অন্নদাশঙ্কর রায়

তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
ভারত ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?

ভাঙছ প্রদেশ ভাঙছ জেলা
জমিজমা ঘরবাড়ী
পাটের আড়ত্ ধানের গোলা
করখানা আর রেলগাড়ী !
তার বেলা ?

চায়ের বাগান কয়লাখনি
কলেজ থানা আপিস-ঘর
চেয়ার টেবিল দেয়ালঘড়ি
পিয়ন পুলিশ প্রোফেসর !
তার বেলা ?

যুদ্ধ জাহাজ জঙ্গী মোটর
কামান বিমান অশ্ব উট
ভাগাভগির ভাঙাভাঙির
চলছে যেন হরির-লুট !
তার বেলা ?

তেলের শিশি ভাঙল বলে
খুকুর পরে রাগ করো
তোমরা যে সব বুড়ো খোকা
বাঙলা ভেঙে ভাগ করো !
তার বেলা?

পাখির মতো - আল মাহমুদ

আম্মা বলেন, পড় রে সোনা
আব্বা বলেন, মন দে;
পাঠে আমার মন বসে না
কাঁঠালচাঁপার গন্ধে।

আমার কেবল ইচ্ছে জাগে
নদীর কাছে থাকতে,
বকুল ডালে লুকিয়ে থেকে
পাখির মতো ডাকতে।

সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়ে
কর্ণফুলীর কূলটায়
দুধভরা ঐ চাঁদের বাটি
ফেরেস্তারা উল্টায়।

তখন কেবল ভাবতে থাকি
কেবল কবে উড়বো,
কেমন করে শহর ছেড়ে
সবুজ গাঁয়ে ঘুরবো!

তোমরা যখন শিখছো পড়া
মানুষ হওয়ার জন্য,
আমি না হয় পাখিই হবো,
পাখির মতো বন্য।

লেখা পড়া করে যেই - মদনমোহন তর্কালঙ্কার

লেখা পড়া করে যেই।
গাড়ী ঘোড়া চড়ে সেই।।
লেখা পড়া যেই জানে।
সব লোক তারে মানে।।
কটু ভাষী নাহি হবে।
মিছা কথা নাহি কবে।।
পর ধন নাহি লবে।
চিরদিন সুখে রবে।।
পিতামাতা গুরুজনে।
সেবা কর কায় মনে।।

পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল - মদনমোহন তর্কালঙ্কার

পাখী সব করে রব রাতি পোহাইল।
কাননে কুসুমকলি সকলি ফুটিল।।
শীতল বাতাস বয় জুড়ায় শরীর।
পাতায়-পাতায় পড়ে নিশির শিশির।।
ফুটিল মালতী ফুল সৌরভ ছুটিল।
পরিমল লোভে অলি আসিয়া জুটিল ॥
গগনে উঠিল রবি সোনার বরণ।
আলোক পাইয়া লোক পুলকিত মন ॥
রাখাল গরুর পাল লয়ে যায় মাঠে।
শিশুগণ দেয় মন নিজ নিজ পাঠে ॥
উঠ শিশু মুখ ধোও পর নিজ বেশ।
আপন পাঠেতে মন করহ নিবেশ ॥

হারাধনের দশটি ছেলে - যোগীন্দ্রনাথ সরকার


হারাধনের দশটি ছেলে
ঘোরে পাড়াময়,
একটি কোথা হারিয়ে গেল
রইল বাকি নয়।

হারাধনের নয়টি ছেলে
কাটতে গেল কাঠ,
একটি কেটে দু 'খান হল
রইল বাকি আট।

গল্প বলা - সুকুমার রায়


"এক যে রাজা"- "থাম না দাদা,
রাজা নয় সে, রাজ পেয়াদা "
"
তার যে মাতুল"- "মাতুল কি সে ?
সবাই জানে সে তার পিসে "
"
তার ছিল এক ছাগল ছানা"-
"
ছাগলের কি গজায় ডানা ?"

কিছু চাই? - সুকুমার রায়


কারোর কিছু চাই গো চাই?
এই যে খোকা, কি নেবে ভাই ?
জলছবি আর লাট্টু লাটাই
কেক বিস্কুট লাল দেশলাই
খেলনা বাঁশি কিংবা ঘুড়ি
লেড্পেনসিল রবার ছুরি ?
এসব আমার কিছুই নাই,
কারোর কিছু চাই গো চাই ?

সাহেব ও মোসাহেব – কাজী নজরুল ইসলাম


সাহেব কহেন, “চমৎকার! সে চমৎকার!”
মোসাহেব বলে, “চমৎকার সে হতেই হবে যে!
হুজুরের মতে অমত কার?”

সাহেব কহেন, “কী চমৎকার,
বলতেই দাও, আহা হা!”
মোসাহেব বলে, “হুজুরের কথা শুনেই বুঝেছি,
বাহাহা বাহাহা বাহাহা!”

সাইক্লোন - শামসুর রাহমান


চাল উড়ছে, ডাল উড়ছে
উড়ছে গরু, উড়ছে মোষ।
খই উড়ছে, বই উড়ছে
উড়ছে পাঁজি, বিশ্বকোষ।
ময়লা চাদর, ফরসা জামা
উড়ছে খেতের শর্ষে, যব।
লক্ষ্মীপেঁচা, পক্ষীছানা
ঘুরছে, যেন চরকি সব।
মাছ উড়ছে, গাছ উড়ছে
ঘূর্ণি হাওয়া ঘুরছে জোর।
খাল ফুলছে, পাল ছিঁড়ছে
রুখবে কারা পানির তোড়?
হারান মাঝি, পরান শেখ
বাতাস ফুঁড়ে দিচ্ছে ডাক।
আকাশ ভেঙে কাচের গুড়ো
উঠল আজান, বাজল শাঁখ।
চম্পাবতির কেশ ভাসছে
ভাসছে স্রোতে খড়ের ঘর।
শেয়াল কুকুর কুঁকড়ো শালিক
ডুবল সবি, ডুবল চর।

সবার আমি ছাত্র - সুনির্মল বসু


আকাশ আমায় শিক্ষা দিল
উদার হতে ভাই রে,
কর্মী হবার মন্ত্র আমি
বায়ুর কাছে পাই রে।
পাহাড় শিখায় তাহার সমান-
হই যেন ভাই মৌন-মহান,
খোলা মাঠের উপদেশে-
দিল-খোলা হই তাই রে।
সূর্য আমায় মন্ত্রণা দেয়
আপন তেজে জ্বলতে,
চাঁদ শিখাল হাসতে মোরে,
মধুর কথা বলতে।
ইঙ্গিতে তার শিখায় সাগর-
অন্তর হোক রত্ন-আকর;
নদীর কাছে শিক্ষা পেলাম
আপন বেগে চলতে।
মাটির কাছে সহিষ্ণুতা
পেলাম আমি শিক্ষা,
আপন কাজে কঠোর হতে
পাষাণ দিল দীক্ষা।

দেশের জন্য - সৈয়দ আলী আহসান


কখনও আকাশ
যেখানে অনেক
হাসিখুশি ভরা তারা,
কখনও সাগর
যেখানে স্রোতের
তরঙ্গ দিশাহারা।

জোনাকিরা - আহসান হাবীব


তারা একটি দুটি তিনটি করে এল
তখন বিষ্টি-ভেজা শীতের হাওয়া
বইছে এলোমেলো,
তারা একটি দুটি তিনটি করে এল।
থই থই থই অন্ধকারে
ঝাউয়ের শাখা দোলে
সেই অন্ধকারে শন শন শন
আওয়াজ শুধু তোলে।

পাখি - বন্দে আলী মিয়া



খাঁচার দুয়ার আলগা পাইয়া উড়ে গেছে পাখি বনে,
ছোট কালো পাখি উড়ে গেছে দূর নীল নভ অঙ্গনে।
শূন্য খাঁচাটি অনাদরে হোথা পড়ে আছে এক ধারে,
খোকা বসি পাশে অশ্রুসজল চোক মোছে বারে বারে।
একদা খোকন দূর দেশে গিয়ে এনেছিল এক পাখি,
সারাদিন তারে করিত যতন সযতনে বুকে রাকি।
ছোট কালো পাখি কুচকুচে দেহ-রেশম পালক তার,
দুটি চোখে তার বনের স্বপন জাগে দূর পারাবার।
এত ভালোবাসা, এতযে সোহাগ, পোষ তবু মানে নাই,
খাঁচার প্রাচীরে পাখা ঝাপটিয়া, পথ খুঁজিয়াছে তাই
খোকা চায় পাখি - পাখি চায় বন-স্বাধীন মুক্ত প্রাণ,
কন্ঠে তাহার জাগে ক্ষণে ক্ষণে নীল আকাশের গান।
খোকা ভাবে মনে, পাখি তাহার-গান সে শোনায় তায়
জানে না তো কভু কান্না তাহার সুর হয়ে বাহিরায়।
গান শুনি তার মুগ্ধ হইয়া ভেবেছিল খোকা মনে-
পোষ মানিয়াছে, ভুলে গেছে বন - রবে সে তাহার সনে।
আদর করিয়া খাঁচার দুয়ার দিল একেবারে খুলি
মন কভু কারো বশ নাহি মানে, সে কথা গেল যে ভুলি।
সহসা পাখিটি কালে ডানা মেলি উড়ে গেল দূর দেশে,
তারি শোকে আজ খোকার নয়ন অশ্রুতে যায় ভেসে।
_