Showing posts with label শিশুতোষ ছড়া/কবিতা. Show all posts
Showing posts with label শিশুতোষ ছড়া/কবিতা. Show all posts

চাষী - রাজিয়া খাতুন চৌধুরাণী


সব সধকের বড় সাধক আমার দেশের চাষা,
দেশ মাতারই মুক্তিকামী, দেশের সে যে আশা।
দধীচি কি তাহার চেয়ে সাধক ছিল বড়?
পুণ্য অত হবে নাক সব করিলেও জড়।
মুক্তিকামী মহাসাধক মুক্ত করে দেশ,
সবারই সে অন্ন জোগায় নাইক গর্ব লেশ।
ব্রত তাহার পরের হিত, সুখ নাহি চায় নিজে,
রৌদ্র দাহে শকায় তনু, মেঘের জলে ভিজে।
আমার দেশের মাটির ছেলে, নমি বারংবার
তোমায় দেখে চূণ হউক সবার অহংকার।

শিক্ষাগুরুর মর্যাদা - কাজী কাদের নেওয়াজ


 
বাদশাহ্ আলমগীর-
কুমারে তাঁহার পড়াইত এক মৌলবী দিল্লীর্
একদা প্রভাতে গিয়া
দেখেন বাদশা-শাহাজাদা এক পাত্র হস্তে নিয়া
ঢালিতেছে বারি গুরুর চরণে
পুলকিত হৃদে আনত-নয়নে,
শিক্ষক শুধু নিজ হাত দিয়া নিজেরি পায়ের ধূলি
ধুয়ে মুছে সব করিছেন সাফ সঞ্চারি অঙ্গুলি।


শিক্ষক মৌলবী
ভাবিলেন, আজি নিস্তার নাহি, যায় বুঝ তাঁর সবি।
দিল্লীপতির পুত্রের করে
লইয়াছে পানি চরণের পরে,
স্পর্ধার কাজ, হেন অপরাধ কে করেছে-কোন কালে।
ভবিতে ভাবিতে চিন্তার রেখা দেখা দিল তাঁর ভালে।
হঠাৎ কী ভাবি উঠি
কহিলেন, আমি ভয় করি নাক, যায় যাবে শির টুটি,
শিক্ষক অমি শ্রেষ্ঠ সবার
দিল্লীর পতি সে তো কোন ছার,
ভয় করি নাক, ধারি নাক ধার, মনে আছে মোর বল,
বাদশাহ শুধালে শাস্ত্রের কথা শুনাব অনর্গল
যায় যাবে প্রাণ তাহে,
প্রাণের চেয়েও মান বড়, আমি বোঝাব শাহানশাহে।
তার পরদিন প্রাতে
বাদশাহর দূত শিক্ষকে ডেকে নিয়ে গেল কেল্লাতে।
শিক্ষকে ডাকি বাদশাহ কহেন,‘শুনুন জনাব তবে,
পুত্র আমার আপনার কাছে
সৌজন্যকি কি কিছু শিখিয়াছে?
বরং শিখেছে বেয়াদবি আর গুরুজনে অবহেলা,
নাহিলে সেদিন দেখিলাম যাহা স্বয়ং সকাল বেলা।
শিক্ষক কন-‘জাহাপনা, আমি বুঝিতে পারি নে, হায়,
কী কথা বলিতে আজিকে আমায় ডেকেছেন নিরালায়?’
বাদশাহ কহেন, ‘সেদিন প্রভাতে
দেখিলাম আমি দাঁড়ায়ে তফাতে
নিজ হাতে যবে চরণ আপনি করেন প্রক্ষালন,
পুত্র আমার জল ঢালি শুধু ভিজাইছে চরণ।
নিজ হাত খানি আপনার পায়ে বুলাইয়া সযতনে
ধুয়ে দিল না'ক কেন সে চরণ, স্মরি ব্যাথা পাই মনে।
উচ্ছ্বাস ভরে শিক্ষক তবে দাঁড়ায়ে সগৌরবে,
কুর্ণিশ করি বাদশাহর তরে কহেন উচ্চরবে-
আজ হতে চিরউন্নত হল শিক্ষাগুরুর শির
সত্যই তুমি মহান উদার বাদশাহ আলমগীর।

এত হাসি কোথায় পেলে - জসীম উদ্‌দীন

এত হাসি কোথায় পেলে
এত কথার খলখলানি
কে দিয়েছে মুখটি ভরে
কোন বা গাঙের কলকলানি।
কে দিয়েছে রঙিন ঠোঁটে
কলমি ফুলের গুলগুলানি।
কে দিয়েছে চলন-বলন
কোন সে লতার দুলদুলানি।
কাদের ঘরে রঙিন পুতুল
আদরে যে টুইটুবানি।

কে এনেছে বরণ ডালায়
পাটের বনের বউটুবানি।
কাদের পাড়ায় ঝামুর ঝুমুর
কাদের আদর গড়গড়ানি।
কাদের দেশের কোন সে চাঁদের
জোছনা ফিনিক ফুলছড়ানি।
তোমায় আদর করতে আমার
মন যে হল উড়উড়ানি
উড়ে গেলাম সুরে পেলাম
ছড়ার গড়ার গড়গড়ানি।

তুলনা - শেখ ফজলল করীম

 
 
 
 
সাত শত ক্রোশ করিয়া ভ্রমণ জ্ঞানীর অন্বেষণে,
সহসা একদা পেল সে প্রবীণ কোনো এক মহাজনে।
শুধাল, “হে জ্ঞানী আকাশের চেয়ে উচ্চতা বেশি কার?
জ্ঞানী বলেবাছা, সত্যের চেয়ে উঁচু নাহি কিছু আর।
পুনঃসে কহিলপৃথিবীর চেয়ে ওজনে ভারী কী আছে?”
জ্ঞানী বলে, “বাছা, নিষ্পাপ জনে দোষারোপ করা মিছে।
জিজ্ঞাসে পুনঃ, “পাথরের চেয়ে কী আছে অধিক শক্ত?”
জ্ঞানী বলে, “বাছা,‍ সেই যে হৃদয় জগদীশ-প্রেম-ভক্ত।
কহিল আবার, “অনলের চেয়ে উত্তাপ বেশি কার?”
জ্ঞানী বলে,“বাছা ঈর্ষার কাছে বহ্নিতাপও ছার
পুছির পথিক, “বরফের চেয়ে শীতল কি কিছু নাই?”
জ্ঞানী বলে, “বাছা, স্বজন-বিমুখ হৃদয় যে ঠিক তাই
শুধাল সে জন, “সাগর হইতে কে অধিক ধনবান?”
জ্ঞানী বলে, “বাছা, তুষ্ট হৃদয় তারো চেয়ে গরীয়ান।


_