তাঁর
করতলে
পলিমাটির সৌরভ
ছিল
তাঁর
পিঠে
রক্তজবার মত
ক্ষত
ছিল।
তিনি
অতিক্রান্ত পাহাড়ের কথা
বলতেন
অরণ্য
এবং
শ্বাপদের কথা
বলতেন
পতিত
জমি
আবাদের
কথা
বলতেন
তিনি
কবি
এবং
কবিতার
কথা
বলতেন।
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য
শব্দ
কবিতা,
কর্ষিত
জমির
প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
ঝড়ের
আর্তনাদ শুনবে।
সে
দিগন্তের অধিকার
থেকে
বঞ্চিত
হবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
আজন্ম
ক্রীতদাস থেকে
যাবে।
স্বপ্নের কথা
বলছি।
উনুনের
আগুনে
আলোকিত
একটি
উজ্জ্বল জানালার কথা
বলছি।
যে
সাতার
জানে
না
তাকেও
ভাসিয়ে
রাখে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
মাছের
সঙ্গে
খেলা
করতে
পারে
না।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
মা’য়ের কোলে শুয়ে
গল্প
শুনতে
পারে
না
গর্ভবতী বোনের
মৃত্যুর কথা
বলছি
ভালোবাসা দিলে
মা
মরে
যায়
যুদ্ধ
আসে
ভালোবেসে
মা’য়ের ছেলেরা চলে
যায়,
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
সন্তানের জন্য
মরতে
পারে
না।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
ভালোবেসে যুদ্ধে
যেতে
পারে
না।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধরে
রাখতে
পারে
না।
তাঁর
পিঠে
রক্তজবার মত
ক্ষত
ছিল
কারণ
তিনি
ক্রীতদাস ছিলেন।
আমরা
কি
তা’র মতো কবিতার
কথা
বলতে
পারবো,
আমরা
কি
তা’র মতো স্বাধীনতার কথা
বলতে
পারবো!
তিনি
মৃত্তিকার গভীরে
কর্ষণের কথা
বলতেন
অবগাহিত ক্ষেত্রে
পরিচ্ছন্ন বীজ
বপনের
কথা
বলতেন
সবত্সা
গাভীর
মত
দুগ্ধবতী শস্যের
পরিচর্যার কথা
বলতেন
তিনি
কবি
এবং
কবিতার
কথা
বলতেন।
যে
কর্ষণ
করে
তাঁর
প্রতিটি স্বেদবিন্দু কবিতা
কর্ষিত
জমির
প্রতিটি শস্যদানা কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
শস্যহীন প্রান্তর তাকে
পরিহাস
করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
মাতৃস্তন্য থেকে
বঞ্চিত
হবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
আজন্ম
ক্ষুধার্ত থেকে
যাবে।
যখন
প্রবঞ্চক ভূস্বামীর প্রচন্ড দাবদাহ
আমাদের
শস্যকে
বিপর্যস্ত করলো
তখন
আমরা
শ্রাবণের মেঘের
মত
যূথবদ্ধ হলাম।
বর্ষণের স্নিগ্ধ প্রলেপে
মৃত
মৃত্তিকাকে সঞ্জীবিত করলাম।
বারিসিক্ত ভূমিতে
পরিচ্ছন্ন বীজ
বপন
করলাম।
সুগঠিত
স্বেদবিন্দুর মত
শস্যের
সৌকর্য
অবলোকন
করলাম,
এবং
এক
অবিশ্বাস্য আঘ্রাণ
আনিঃশ্বাস গ্রহণ
করলাম।
তখন
বিষসর্প প্রভুগণ
অন্ধকার গহ্বরে
প্রবেশ
করলো
এবং
আমরা
ঘন
সন্নিবিষ্ট তাম্রলিপির মত
রৌদ্রালোকে উদ্ভাসিত হলাম।
তখন
আমরা
সমবেত
কন্ঠে
কবিতাকে ধারণ
করলাম।
দিগন্ত
বিদীর্ণ করা
বজ্রের
উদ্ভাসন কবিতা
রক্তজবার মত
প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
পরভৃতের গ্লানি
তাকে
ভূলুন্ঠিত করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
অভ্যূত্থানের জলোচ্ছ্বাস তাকে
নতজানু
করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
পলিমাটির সৌরভ
তাকে
পরিত্যাগ করবে।
তিনি
স্বপ্নের মত
সত্য
ভাষণের
কথা
বলতেন
সুপ্রাচীন সংগীতের আশ্চর্য ব্যাপ্তির কথা
বলতেন
তিনি
কবি
এবং
কবিতার
কথা
বলতেন।
যখন
কবিকে
হত্যা
করা
হল
সৌভ্রত্রে সম্মিলিত হলাম।
প্রজ্জ্বলিত সূর্যের মত
অগ্নিগর্ভ হলাম।
ক্ষিপ্রগতি বিদ্যুতের মত
ত্রিভূবন পরিভ্রমণ করলাম।
এবং
হিংস্র
ঘাতক
নতজানু
হয়ে
কবিতার
কাছে
প্রাণভিক্ষা চাইলো।
তখন
আমরা
দুঃখকে
ক্রোধ
এবং
ক্রোধকে আনন্দিত করলাম।
সম্মিলিত কন্ঠস্বর কবিতা
অবদমিত
ক্রোধের আনন্দিত উত্সারণ কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
তরঙ্গের সৌহার্দ থেকে
বঞ্চিত
হবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
নিঃসঙ্গ বিষাদ
তাকে
অভিশপ্ত করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
মূক
ও
বধির
থেকে
যাবে।
তাঁর
পিঠে
রক্তজবার মত
ক্ষত
ছিল
অভ্যূত্থানের কথা
বলছি
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের মত
কমলের
চোখের
কথা
বলছি
প্রস্ফুটিত পুষ্পের মত
সহস্র
ক্ষতের
কথা
বলছি
এবং
স্বাধীনতার কথা
বলছি।
যখন
রাজশক্তি আমাদের
আঘাত
করলো
তখন
আমরা
প্রাচীণ সংগীতের মত
ঋজু
এবং
সংহত
হলাম।
পর্বত
শৃংগের
মত
মহাকাশকে স্পর্শ
করলাম।
দিকচক্রবালের মত
দীর্ঘ
থেকে
দীর্ঘতর হলাম;
এবং
শ্বেত
সন্ত্রাসকে
সমূলে
উত্পাটিত করলাম।
তখন
আমরা
নক্ষত্রপুঞ্জের মত
উজ্জ্বল এবং
প্রশান্ত হলাম।
উত্ক্ষিপ্ত নক্ষত্রের প্রস্ফুটিত ক্ষতচিহ্ন কবিতা
স্পর্ধিত মধ্যাহ্নের আলোকিত
উম্মোচন কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
নীলিমাকে স্পর্শ
করতে
পারে
না।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
মধ্যাহ্নের প্রত্যয়ে প্রদীপ্ত হতে
পারে
না।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
সন্ত্রাসের প্রতিহত করতে
পারে
না।
উদ্বেল
অভিযাত্রার কথা
বলছি
আদিবাস
অরণ্যের
অনার্য
সংহতির
কথা
বলছি
শৃংখলিত বৃক্ষের
উর্দ্ধমুখী অহংকারের কথা
বলছি,
শৃংখলিত বৃক্ষের উর্দ্ধমুখী অহংকার
কবিতা
আদিবাস
অরণ্যের অনার্য
সংহতি
কবিতা।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
যূথভ্রষ্ট বিশৃংখলা তাকে
বিপর্যস্ত করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
বিভ্রান্ত অবক্ষয়
তাকে
দৃষ্টিহীন করবে।
যে
কবিতা
শুনতে
জানে
না
সে
আজন্ম
হীনমন্য থেকে
যাবে।
যখন
আমরা
নগরীতে
প্রবেশ
করলাম
তখন
চতুর্দিকে ক্ষুধা।
নিঃসঙ্গ মৃত্তিকা শস্যহীন
ফলবতী
বৃক্ষরাজি নিস্ফল
এবং
ভাসমান
ভূখন্ডের মত
যখন
আমরা
নগরীতে
প্রবেশ
করলাম
তখন
আদিগন্ত বিশৃংখলা।
নিরুদ্দিষ্ট সন্তানের জননী
শোকসন্তপ্ত
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ বিভ্রান্ত
এবং
রক্তবর্ণ কমলের
মত
বিস্ফোরিত নেত্র
দৃষ্টিহীন।
তখন
আমরা
পূর্বপুরুষকে
স্মরণ
করলাম।
প্রপিতামহের বীর
গাঁথা
স্মরণ
করলাম।
আদিবাসী অরণ্য
এবং
নতজানু
শ্বাপদের কথা
স্মরণ
করলাম।
তখন
আমরা
পর্বতের মত
অবিচল
এবং
ধ্রুবনক্ষত্রের মত
স্থির
লক্ষ্য
হলাম।
সশস্ত্র অভ্যুত্থানের কথা
বলছি
শ্রেণীযুদ্ধের অলিন্দে
ইতিহাসের বিচরণের কথা
বলছি
স্বপ্নের মত
সত্যভাষণ ইতিহাস
ইতিহাসের আনন্দিত অভিজ্ঞান কবিতা
যে
বিনিদ্র সে
স্বপ্ন
দেখতে
পারে
না
যে
অসুখী
সে
কবিতা
লিখতে
পারে
না।
যে
উদ্গত
অংকুরের মত
আনন্দিত
সে
কবি
যে
সত্যের
মত
স্বপ্নভাবী
সে
কবি
তখন
প্রত্যেকে কবি।
এবং
অন্তিম
সংগ্রামের কথা
বলছি।
খন্ডযুদ্ধের বিরতিতে
আমরা
ভূমি
কর্ষণ
করেছি।
হত্যা
এবং
ঘাতকের
সংকীর্ণ ছায়াপথে
পরিচ্ছন্ন বীজ
বপন
করেছি।
শস্যের
পরিচর্যা করছি।
আমাদের
মুখাবয়ব অসুন্দর
কারণ
বিকৃতির প্রতি
ঘৃণা
আমাদের
কণ্ঠস্বর রূঢ়
কারণ
অন্যায়ের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
কণ্ঠকে
কর্কশ
করে
তোলে।
আমাদের
পৃষ্ঠদেশে নাক্ষত্রিক ক্ষতচিহ্ন
কারণ
উচ্চারিত শব্দ
আশ্চর্য বিশ্বাসঘাতক
আমাদেরকে বারবার
বধ্যভূমিতে উপনীত
করেছে।
আমার
সন্তানেরা
যেদিন
প্রতিটি উচ্চারিত শব্দ
সূর্যের মত
সত্য
হবে
সেই
ভবিষ্যতের কথা
বলছি,
সেই
ভবিষ্যতের কবিতার
কথা
বলছি।
চির
প্রয়াণের কথা
বলছি
দ্বন্দ্ব এবং
বিরোধের
পরিসমাপ্তির কথা
বলছি
সুতীব্র ঘৃণার
চূড়ান্ত অবসানের কথা
বলছি।
সুকণ্ঠ
সংগীতের কথা
বলছি।
যে
কর্ষণ
করে
শস্যের
সম্ভার
তাকে
সমৃদ্ধ
করবে।
যে
মত্স্য
লালন
করে
যে
গাভীর
পরিচর্যা করে
জননীর
আশীর্বাদ তাকে
দীর্ঘায়ু করবে।
যে
লৌহখন্ডকে প্রজ্জ্বলিত করে
ইস্পাতের তরবারি
তাকে
সশস্ত্র করবে।
দীর্ঘদেহ পুত্রগণ
বোনের
মৃত্যুর কথা
বলছি
ভাইয়ের
যুদ্ধের কথা
বলছি
সশস্ত্র সুন্দরের অনিবার্য অভ্যুত্থান কবিতা
সুপুরুষ ভালবাসার সুকণ্ঠ
সংগীত
কবিতা
জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি মুক্ত
শব্দ
কবিতা
রক্তজবার মতো
প্রতিরোধের উচ্চারণ কবিতা।
আমরা কি তাঁর মত কবিতার কথা বলতে পারবো
আমরা কি তাঁর মত স্বাধীনতার কথা বলতে পারবো ?