Showing posts with label আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা. Show all posts
Showing posts with label আঞ্চলিক ভাষায় কবিতা. Show all posts

পরানের গহীন ভিতর- ২৭ - সৈয়দ শামসুল হক


আউসের খ্যাতে মাঠে যুবতীরা দিতাছে সাঁতার,
দ্যাখো না কেমন তারা চিতলের মতো খেলা করে,
কি তারা তালাশ করে দিনমান নাগর- ভাতার-
যারা ডুব দিয়া আছে এই ধান বানের সাগরে;

পরানের গহীন ভিতর- ২৬ - সৈয়দ শামসুল হক


ক্যান তুই গিয়াছিলি?- আমি তরে জিগামু অখন
চান্দের ভিতর ফের, যেইখানে জটিলতা বাড়ে,
অশথ জড়ায়া থাকে নদী নিয়া জলের কিনারে,
আমার গেরাম ঘিরা যেইখানে খালি পলায়ন?-

পরানের গহীন ভিতর- ২৮ - সৈয়দ শামসুল হক


ঝকঝক ঝকঝক সারাদিন করে আয়নাটা-
বুকে নাই ছবি নাই পড়ে নাই একখান ছবি,
বেবাক একাকী য্যান সুনসান ইস্কুরুপে আঁটা,
যা চাই তা নাই তয় চমৎকার আছে আর সবি।

পরানের গহীন ভিতর- ৩০ - সৈয়দ শামসুল হক


আরে ইসের বেটি, চুলে দিয়া শিমুলের ফুল
যাস কই? কই যাস? যুবকের মাঝখান দিয়া?
মানুষ গাঙ্গের মতো, বানে ভাসে তারো দুই কুল-
সে পানি কাতান বড়, খলবল রঙ তার সিয়া।

পরানের গহীন ভিতর- ৩১ - সৈয়দ শামসুল হক



কে করে পরশ তার জীবনের এত জটিলতা?
তোমার অধিক টান দেয় বৃক্ষ দেয় বিষলতা;
একবার আমারে আছাড় দিয়া সোজা করে ফের,
আমারই মতন যারা বেশুমার সন্তান মায়ের।
কিসে যে চালনা করে এই দেহ এই ভবিষ্যৎ-
কিছুই বুঝি না, দেখি আচানক শেষ হয় পথ,
যে পথেই মেলা দেই সেই পথে ভয়ানক ভূত-
বড় কঠিন জাগা, বসবাস বড়ই অদ্ভূত।
তয় কি ছাড়ান দিমু হাতে ধরা শেষ রশিখান?
তয় কি পাথারে দিমু কও দেখি বেঘোরে পরান?
নাকি তুমি একবার হাত দিয়া ডাক দিবা কাছে
আমারে আমার মতন যারা একা একা আছে,
সকলেরে একজোট কইরা নি তুলবা আবার?
তোমার নিকটে রাখি নিদানের এই দরবার।

পরানের গহীন ভিতর- ৩৩ - সৈয়দ শামসুল হক



এমন বৃক্ষ কি নাই ডালে যার নাই কোনো পরী,
এমন নদী কি নাই জলে যার পড়ে না চেহারা,
এমন যাত্রা কি নাই যাতে নাই পরনের তরী,
এমন ডুলি কি নাই যাতে নাই নিষেধের ঘেরা,

পরানের গহীন ভিতর- ১৩ - সৈয়দ শামসুল হক

তোমার বিয়ার দিনে মনে হইল, সত্য নিও মনে,
এত বড় এত গোল কোনোদিন দেখি নাই চান।
তুলার মতন ফুল, রাণী য্যান দরবারে বসা,
নদী গহীন তলে জোছনায় দিয়া সে প্রাসাদ।

পরানের গহীন ভিতর-১০ - সৈয়দ শামসুল হক


কে য্যান কানতে আছে- তার শব্দ পাওয়া যায় কানে,
নদীও শুকায়া যায়, আকালের বাতাস ফোঁপায়,
মানুষেরা বাড়িঘর বানায় না আর এই খানে,
গোক্ষুর লতায়া ওঠে যুবতীর চুলের খোঁপায়।

পরানের গহীন ভিতর-৯ - সৈয়দ শামসুল হক


একবার চাই এক চিক্কুর দিবার, দিমু তয়?
জিগাই কিসের সুখে দুঃখ নিয়া তুমি কর ঘর?
আঙিনার পাড়ে ফুলগাছ দিলে কি সোন্দর হয়,
দুঃখের কুসুম ঘিরা থাকে যার, জীয়ন্তে কবর

পরানের গহীন ভিতর-৭ - সৈয়দ শামসুল হক


নদীর কিনারে গিয়া দেখি নাও নিয়া গ্যাছে কেউ
অথচ এই তো বান্ধা আছিল সে বিকাল বেলায়।
আমার অস্থির করে বুঝি না কে এমন খেলায়,
আমার বেবাক নিয়া শান্তি নাই, পাচে পাছে ফেউ।
পানির ভিতরে য্যান ঘুন্নি দিয়া খিলখিল হাসে
যত চোর যুবতীরা, গ্যারামের শ্যাষ সীমানায়
বটের বৈরাগী চুল, ম্যাঘে চিল হারায় বারায়,
বুকের ভিতরে শিস দিয়া সন্ধা হাঁটে আশেপাশে।
এখন কোথায় যাই, এইখানে বড় সুনসান,
মানুষের দুঃখ আছে, জগতের আছে কিনা জানি না-
জগৎ এমনভাবে হয়া যায় হঠাৎ অচিনা।
মনে হয় আমার থিকাও একা বৃক্ষের পরান,
আমার থিকাও দুঃখী যমুনার নদীর কিনার।
আমার তো গ্যাছে এক, কত কোটি লক্ষ গ্যাছে তার।।

পরানের গহীন ভিতর-৮ - সৈয়দ শামসুল হক


আমারে তলব দিও দ্যাখো যদি দুঃখের কাফন
তোমারে পিন্ধায়া কেউ অন্যখানে যাইবার চায়
মানুষ কি জানে ক্যান মোচড়ায় মানুষের মন,
অহেতুক দুঃখ দিয়া কেউ ক্যান এত সুখ পায়?

পরানের গহীন ভিতর-৩ - সৈয়দ শামসুল হক

সে কোন বাটিতে কও দিয়াছিলা এমন চুমুক
নীল হয়া গ্যাছে ঠোঁট, হাত পাও শরীল অবশ,
অথচ চাও না তুমি এই ব্যাধি কখনো সারুক।
আমার জানতে সাধ, ছিল কোন পাতার সে রস?

পরানের গহীন ভিতর-২ - সৈয়দ শামসুল হক


আন্ধার তোরঙ্গে তুমি সারাদিন কর কি তালাশ?
মেঘের ভিতর তুমি দ্যাখ কোন পাখির চক্কর?
এমন সরল পথ তবু ক্যান পাথরে টক্কর?
সোনার সংসার থুয়া পাথারের পরে কর বাস?

পরানের গহীন ভিতর-১ - সৈয়দ শামসুল হক


জামার ভিতর থিকা যাদুমন্ত্রে বারায় ডাহুক,
চুলের ভিতর থিকা আকবর বাদশার মোহর,
মানুষ বেকুব চুপ,হাটবারে সকলে দেখুক
কেমন মোচড় দিয়া টাকা নিয়া যায় বাজিকর ৷

পরানের গহীন ভিতর- ৫ | সৈয়দ শামসুল হক


~
তোমার দ্যাশের দিকে ইস্টিশানে গেলেই তো গাড়ি
সকাল বিকাল আসে, এক দন্ড খাড়ায়া চম্পট,
কত লোক কত কামে দূরে যায়, ফিরা আসে বাড়ি-
আমার আসন নাই, যাওনেরও দারুন সংকট।
আসুম? আসার মতো আমি কোনো ঘর দেখি নাই।
যামু যে? কোথায় যামু, বদলায়া গ্যাছে যে বেবাক।

পরানের গহীন ভিতর- ২৯ | সৈয়দ শামসুল হক



তোমারে যে ভালোবাসে এর থিকা আরো পাঁচগুণ
আল্লার কসম আমি দিমু তারে এই জামাখান,
আমার কলম আমি দিমু তারে, শরীলের খুন
দোয়াত ভরায়া দিমু, অনুরোধ কালি একখান-
সে য্যান আমার থিকা আরো ভালো পদ্য লেখে আর
যাদুমন্ত্রে রূপার শিকল হাতে দিতে পারে তার।

পরানের গহীন ভিতর-৬ - সৈয়দ শামসুল হক

তোমার খামচির দাগ এখনো কি টকটকা লাল,
এখনও জ্বলন তার চোতরার পাতার লাহান।
শয়তান, দ্যাখো না করছ কি তুমি কি সোন্দর গাল,
না হয় দুপুর বেলা একবার দিছিলাম টান?

পরানের গহীন ভিতর (৪) – সৈয়দ শামসুল হক

আমি কার কাছে গিয়া জিগামু সে দুঃখ দ্যায় ক্যান,
ক্যান এত তপ্ত কথা কয়, ক্যান পাশ ফিরা শোয়,
ঘরের বিছন নিয়া ক্যান অন্য ধান খ্যাত রোয়?-
অথচ বিয়ার আগে আমি তার আছিলাম ধ্যান।
_